মোঃ আলী আশরাফ ইলিয়াস
কেন্দুয়া,নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ৭ই নভেম্বরের বিজয় ও সংহতি দিবস দুটি ভিন্ন স্থানে উদযাপন করে, যা দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। দলটির দুটি পৃথক পক্ষ তাদের নিজ নিজ নেতৃত্বে দিবসটি পালন করে, যা কেন্দুয়া উপজেলার রাজনীতিতে বিএনপির ভাঙনের একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া দুলালের নেতৃত্বে একটি পক্ষ কেন্দুয়া উপজেলা পাবলিক হলে অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এই পক্ষের অনুসারীরা তাদের বক্তব্যে বিএনপির দীর্ঘ ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে দলের অবদান তুলে ধরেন। বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন এবং বিএনপির আদর্শে অবিচল থাকার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, রফিকুল ইসলাম হিলালীর নেতৃত্বাধীন পক্ষ কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে দিবসটি উদযাপন করে। এই আয়োজনেও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং এরপর নেতারা বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে বিএনপির ঐক্য ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উভয় স্থানের অনুষ্ঠানে দলীয় নেতারা বিএনপির গৌরবময় ইতিহাস, ৭ই নভেম্বরের বিজয়ের তাৎপর্য এবং জাতীয় সংহতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন।
বিভক্তি প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদিন ভুইয়া কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন – আমাদের মাঝে আদৌ কোন বিভক্তি নেই। কেন্দুয়া উপজেলা বি এন পি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। যারা আলাদা ভাবে আয়োজন করেছেন তারা উপজেলা বিএনপির কোন পদ পদবীধারী নন তাই এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা।
সাবেক পৌর বি এন পির আহবায়ক সৈয়দ মাহমুদুল হক ফারুক বলেন, আমাদের মাঝে আসলে বিভক্তি বলতে কিছু নেই। এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বেশ কয়েকজন তারা বিভিন্ন সময় আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে পৌর বি এন পির সাবেক সাধারণ সম্পাদক
মজনু খন্দকার বলেন – কথায় বলে পর মানুষে দু:খ দিলে মেনে নেয়া যায় কিন্ত আপন মানুষ দূ:খ দিলে মেনে নেয়া যায় না। সৈয়দ আলমগীর, দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম এরা সবাই বি এন পি নেতা নিশ্চয়ই বিচ্ছিন্ন কেউ নন। উপজেলা বি এন পিতে পদ পদবী নেই বলে তারা কি বি এন পি করেন না?
৭ই নভেম্বরকে বিএনপি একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে মনে করে, যেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় সংহতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দুয়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এই ঐক্যের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্থানীয় বিএনপির দুটি পৃথক নেতৃত্বের মাধ্যমে এই দিবস উদযাপন করা, দলের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এবং সাংগঠনিক দুর্বলতাকে তুলে ধরে।
কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির বিভক্তি এবং পৃথক পৃথক আয়োজনে ৭ই নভেম্বরের উদযাপন দলটির রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করার পাশাপাশি দলের ঐক্যের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। নেতৃবৃন্দ দলীয় আদর্শ ও ঐতিহ্য তুলে ধরলেও অভ্যন্তরীণ বিভক্তি দলটির ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।