November 2, 2024, 5:25 am
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে এবং পুলিশ ও বিআরটিএর নজরদারির অভাবে ঢাকার বাইরের যানবাহন ঢুকে পড়ছে রাজধানীতে।
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাস, মিনিবাস, সিএনজি অটোরিকশা, অবৈধ ব্যাটারির রিকশা ও ইজিবাইকগুলো এখন অবাধে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার থেকে এসব বাস ও মিনিবাস ঢাকায় ঢুকে যাত্রী পরিবহন করছে। অথচ ঢাকায় চলাচলের জন্য তাদের রুটপারমিট নেই।
এর ফলে রাজধানীর সড়কগুলোতে যানজট আগের চেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে জামালপুরগামী রাজিব পরিবহনের কর্মী ওসমান জানান, সরকার পরিবর্তনের পর রাজধানীর সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই।
পুরাতন, লক্কড়ঝক্কড় বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের রুটের বাসগুলোও ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে। সাভার থেকে গুলিস্তান, আব্দুল্লাহপুর থেকে গুলিস্তান, সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে।
তেজগাঁও, গাবতলী ও উত্তরার বিভিন্ন সড়কে রাতের বেলায় এসব গাড়ি থামিয়ে রাখতেও দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ, বিআরটিএ রাস্তায় না থাকায় পরিবহন কর্মীরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে।
ভয় ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে লোকজন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে।
ওই সময় থেকেই লক্কড়ঝক্কড়, মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও মিনিবাসগুলো সড়কে নেমে আসে এবং যাত্রী পরিবহন শুরু করে। গাবতলী, আমিনবাজার, বসিলা, কেরানীগঞ্জ, ডেমরা, শনিরআখড়া, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া ও টঙ্গী এলাকার গ্যারেজসহ বিভিন্ন স্থানে বসে থাকা অকোজো বাসগুলো মেরামত করে রাস্তায় যাত্রী পরিবহন করছে।
গত দুই মাসে কমপক্ষে ১ হাজার এ ধরনের বাস ও মিনিবাস রাস্তায় নেমেছে।
ফিটনেসবিহীন বাস-মিনিবাস ডেমরা ও শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত অবাধে চলছে। আগে যেসব বাস টঙ্গী থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার রুটপারমিট নিয়ে চলাচল করত- সেসব বাস এখন সুযোগ পেলেই খোদ ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে বলে পরিবহন কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে।
লাব্বায়েক ও আজমেরী পরিবহনের কর্মীরা জানান, ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পুলিশ আগের মতো কঠোর অবস্থানে না থাকায় ঢাকার বাইরের রুটের অকেজো বাসগুলো মেরামত করে রাস্তায় নামানো হয়েছে এবং এখন এসব বাস অবাধে চলাচল করছে।
আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, বাবুবাজার, সাইনবোর্ড, ডেমরা এলাকার প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। পুলিশ এখন অনেক কিছুই দেখেও না দেখে বসে থাকে।
এই সুযোগে নগরীর বাইরের বাস-মিনিবাস ঢাকায় ঢুকে যানজট বাড়াচ্ছে।
এছাড়া নানা ধরনের ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকে এখন ঢাকার সব রাস্তা সয়লাব।
প্রধান সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতেও এদের চলাচল পথচারীদের জন্য এক ধরনের যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহে এসব অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযানের ঘোষণা দেয়।
কিছু রিকশা আটকও করে। তবে এতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের বসিলা, আটিবাজার ও আশপাশের এলাকার শত শত অবৈধ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক মোহাম্মদপুর হয়ে ঢাকার মূল রাস্তায় ঢুকে পড়ে।
ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গী, আশুলিয়া, সাভার এলাকা থেকেও একইভাবে এসব যানবাহন ঢাকায় ঢুকে পড়ছে। এরপর তারা শহরজুড়ে যাত্রী পরিবহন করছে। একদিকে সড়কের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।
অন্যদিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলাচল এবং উল্টোপথে চলাচলের ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে।
ব্যাটারি রিকশা চালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আগে তিনি বসিলা এলাকায় এই রিকশা চালাতেন। সরকার পরিবর্তনের আগে স্থানীয় অলিগলিতে চাঁদা দিয়ে রিকশা চালাতেন।
এখন আর রাস্তায় চাঁদা দিতে হয় না। শত শত ব্যাটারি রিকশা চলছে। শহরের মূল রাস্তায় চালালেও পুলিশ কিছু বলছে না। তাই প্রতিদিনই ঢাকার শহরের বিভিন্ন স্থানে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছেন।
এতে আয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অলিগলিতে রিকশা চালাতে ২০-২৫ টাকার বেশি খ্যাপ পাওয়া যায় না। এখন ১০০ থেকে দেড়শ টাকার খ্যাপও পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রী নিয়ে যেখানে ইচ্ছে সেখানেই যেতে পারছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট ও কনস্টেবল জানান, সরকার পরিবর্তনের পর সড়কে এখনো শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হয়নি। ইচ্ছা করলেই যে কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার স্বাধীনতা পেয়েছে। পুলিশকে হেনস্তার সুযোগ পেয়েছে। ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করলেও পুলিশ কিছু বলে না। বললে উল্টো চাঁদাবাজির অভিযোগের ভয় দেখায়। তবে প্রধান সড়কগুলোতে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে এবং আইন মানাতে পুলিশ চেষ্টা করছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, অবৈধ যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় যানজট বেড়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়েছে বাস-মিনিবাস ও ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো। এদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চালানো প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পুলিশ ও বিআরটিএকে সক্রিয় হতে হবে। লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোকে সড়ক থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সড়ক আইন মানাতে হবে।
নিউজ লিংক ভোরের কাগজ